Admission
জীববিজ্ঞান - জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র - মানুষের প্রশ্বাস-নিঃশ্বাস নিয়ন্ত্রণ

প্রশ্বাস নিঃশ্বাস নিয়ন্ত্রণঃ

স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় বলে প্রশ্বাস-নিঃশ্বাস নিয়ে আমরা তেমন ভাবি না। পশ্চাৎ মস্তিষ্কের মেডুলায় শ্বসনের এ পনস কেন্দ্র অবস্থিত । কেন্দ্রের নিচের অংশটি (অংকীয়) প্রশ্বাস কেন্দ্র। এটি প্রশ্বাসের হার ও গভীরতা বাড়ায় । এ কেন্দ্রের পৃষ্ঠীয় ও পার্শ্বদেশ প্রশ্বাস বন্ধ করে নিঃশ্বাস ত্বরান্বিত করে । এ অংশগুলো নিঃশ্বাস কেন্দ্র। প্রশ্বাস ও নিঃশ্বাস কেন্দ্র ইন্টারকোস্টাল স্নায়ুর সাহায্যে ইন্টারকোস্টাল পেশির সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে। ব্রঙ্কিওল ও ব্রঙ্কাই মস্তিষ্কের সঙ্গে ভ্যাগাস স্নায়ুর সাহায্যে যুক্ত। ডায়াফ্রাম ও ইন্টারকোস্টাল পেশিতে প্রেরিত ছন্দময় স্নায়ু-উদ্দীপনার ফলে এসব অংশে শ্বসনিক আন্দোলন ঘটে।

প্রশ্বাসের কারণে ফুসফুস ফুলে উঠে, ব্রঙ্কিওলে অবস্থিত রিসেপ্টরগুলো সটান হয়, ফলে তা উদ্দীপ্ত হয়ে ভ্যাগাস স্নায়ুর মাধ্যমে আরও বেশি স্নায়ু উদ্দীপনা নিঃশ্বাস কেন্দ্রে প্রেরণ করে। তখন প্রশ্বাস কেন্দ্র ও প্রশ্বাস সাময়িক বন্ধ থাকে। বহিঃস্থ ইন্টারকোস্টাল পেশি তখন শিথিল হয়, ফুসফুসের টিস্যু চুপসে যায়, ফলে নিঃশ্বাস ঘটে। এরপর ব্রঙ্কিওলগুলো সটান থাকে না, রিসেপ্টরগুলো উদ্দীপ্ত থাকে না। প্রশ্বাস কেন্দ্র তখন নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় এবং আবার প্রশ্বাস শুরু হয়। এভাবে সম্পূর্ণ চক্রটি আজীবন ছন্দায়িত্ব পুনরাবৃত্ত হয়।

"শ্বসনের মৌলিক ছন্দ মেডুলা নিয়ন্ত্রণ করে। এখানে সরবরাহকৃত সমস্ত স্নায়ু কেটে ফেললেও ছন্দ অব্যাহত থাকে । তবে স্বাভাবিক অবস্থায় বিভিন্ন উদ্দীপনা এ মৌলিক ছন্দের হেরফের ঘটাতে পারে। প্রধান যে উদ্দীপনা প্রশ্বাস-নিঃশ্বাসকে নিয়ন্ত্রণ করে তা হচ্ছে রক্তে O2 এর চেয়ে CO2 এর ঘনত্ব। CO2-এর লেভেল বেড়ে গেলে (যেমন-ব্যায়ামের সময়)রক্ত-সংবহনতন্ত্রের ক্যারোটিড ও অ্যাওর্টিক বডিজ (carotid and aortic bodies)-এ অবস্থিত কেমোরিসেপ্টর উদ্দীপ্ত হয়ে প্রশ্বাস কেন্দ্রে স্নায়ু-উদ্দীপনা প্রেরণ করে। প্রশ্বাস কেন্দ্র তখন বহিঃইন্টারকোস্টাল ও ফ্রেনিক স্নায়ুর মাধ্যমে বহিঃইন্টারকোস্টাল পেশি ও ডায়াফ্রামে স্নায়ু-উদ্দীপনা প্রেরণ করে এদের সংকোচনের গতি বড়িয়ে দেয়। এতে প্রশ্বাসের হার বেড়ে যায়। সুযোগ পেলে CO2 দেহে দ্রুত ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে । দেহে দ্রবীভূত হয়ে যে এসিড উৎপন্ন করে তা এনজাইম ও বিভিন্ন প্রোটিন বিনাশ শুরু করে। বার্তাসে CO, ঘনত্ব ০.২৫% বাড়লে শ্বসনের হার দ্বিগুণ হয়ে যায়। অন্যদিকে, বাতাসে যদি O, ঘনত্ব ২০% থেকে ৫% এ নেমে আসে তাহলেও শ্বসনের হার দ্বিগুণ হয়ে যায়) O2-এর ঘনত্বও শ্বসন হারে প্রভাব ফেলে। তবে স্বাভাবিক পরিবেশে প্রচুর O2 থাকে বলে প্রভাবও পড়ে কম। O, ঘনত্বের প্রতি সংবেদী কেমোরিসেপ্টরগুলো মেডুলা এবং অ্যাওর্টিক ও ক্যারোটিড বডিজে অবস্থান করে (এসব বডি CO2 রিসেপ্টার হিসেবেও কাজ করে)।সীমিত মাত্রায় শ্বসনের (প্রশ্বাস-নিঃশ্বাস) হার ও গভীরতাকে ঐচ্ছিক নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। যেমন- বাতাস বুকের ভেতর টেনে নিয়ে ধরে রাখা যায়। ঐচ্ছিক নিয়ন্ত্রণ সজোের শ্বসন, বক্তৃতা করা, গান গাওয়া, হাঁচি ও কাঁশি দেওয়ার জন্যেও হতে পারে । নিয়ন্ত্রণ একবার প্রয়োগ হয়ে গেলে মস্তিষ্কের সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ারে যে স্নায়ু উদ্দীপনার সৃষ্টি হয় তা শ্বসন কেন্দ্রে পৌঁছে নির্দেশ কার্যকর করে।

সটান (strech) রিসেপ্টর ও কেমোরিসেপ্টরের মাধ্যমে প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ একটি নেতিবাচক প্রতিফল । কিন্তু নেতিবাচক প্রতিফল সেরেব্রাল হেমিস্ফিয়ারের ঐচ্ছিক ক্রিয়ায় বাতিল হয়ে যেতে পারে ।

Content added By